জামিয়া রাহমানিয়া: সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আরেকটি মাইল ফলক

আশরাফুল উলূম বড় কাট্টা, জামিয়া কুরআনিয়া লালবাগ মাদরাসা গড়ে উঠবার পিছনে কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে ভূমিকা ছিল হযরত শামছুল হক ফরিদপুরী রহঃএর ৷ তবে সঙ্গে ছিলেন তাঁর সহপাঠী পর্যায়ের পীরজী হুজুর, হাফেজ্জী হুজুর প্রমূখ ৷ জামিয়া নূরিয়া কামরাঙ্গীর চর গড়ে উঠেছে হাফেজ্জী হুজুর রহঃএর একক নেতৃত্বে ৷ অন্য যারা সঙ্গে ছিলেন, তারা সবাই শিষ্য-শাগরেদ ৷ খাদেমুল ইসলাম গওহরডাঙ্গা গড়ে উঠেছে হযরত সদর সাহেব রহঃএর একক নেতৃত্বে ৷ অন্যরা ছিলেন হুজুরের সহযোগী ৷ তেমনি জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া গড়ে উঠেছে হযরত শাইখুল হাদীস রহঃএর একক নেতৃত্বে ৷ অন্য যারা সঙ্গে ছিলেন, তারা সকলেই শায়খের ছাত্র ও ভক্ত ৷

দুর্ভাগ্যজনকভাবে এক সময় হযরত শায়খ রহঃ তার প্রাণের স্পন্দন এই জামিয়ার পক্ষ থেকেই বেদনা দায়ক আচরণের সম্মুখীন হন ৷
সে এক দুঃখজনক ইতিহাস!
চোখের অশ্রুভেজা করুণ উপাখ্যান!!
অনেক বিষয় নিয়েই মতপার্থক্য হয়েছিল ৷ মতপার্থক্য হওয়ার মত বিষয়ও ছিল সেগুলো ৷ কিন্তু শায়খের বিপক্ষবাদী শুভাকাংক্ষীদের পক্ষ থেকে এখতেলাফের সময় ও তার পরবর্তিতে খুব জোরে-শোরে একটি প্রচারণা চালানো হয়েছিল যে, শায়খের হাতে জামিয়া চলে গেলে এখানে কোনো পড়ালেখা হবে না ৷ জামিয়া রাহমানিয়ার সুনাম ধরে রাখা যাবে না ৷ এটা উনিশশ নিরানব্বই-দুইহাজার সালের কথা ৷ দুইহাজার এক সালে আল্লাহর কুদরতী ফয়সালায় জামিয়া রাহমানিয়া আবার হযরত শাইখুল হাদীস রহঃএর হাতে আসে ৷ তাঁর নেতৃত্বেই পরিচালিত হতে আরম্ভ করে রাহমানিয়া ৷ একঝাঁক তরুণ কর্মবীর সহযোদ্ধা নিয়ে তিনি শুরু করেন নতুন করে পথ চলা ৷ সমালোচকদের অপবাদ মিথ্যা প্রমাণ করে আল্লাহর মেহেরবানীতে পূর্বের ধারা অব্যাহত রেখেই চলতে থাকে রাহমানিয়ার অগ্রযাত্রা ৷ পড়ালেখার মানে এতটুকু ছেদ পড়েনি ৷ বরং দিনে দিনে আরো সমৃদ্ধই হয়েছে রাহমানিয়ার ইতিহাস ৷ যার অন্যতম প্রমাণ হল জাতীয় বোর্ড বেফাকুল মাদারিসের কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগুলোতে রাহমানিয়ার ধারাবাহিক সাফল্যের খতিয়ান ৷ দুইহাজার বারো সালে ইন্তেকাল করেন হযরত শায়খ রহঃ ৷ কিন্তু তাঁর নিসবতের বরকতে জামিয়া রাহমানিয়া চলতে থাকে একই গতিতে ৷ ক্রমউন্নতির অভিযাত্রায় আলহামদুলিল্লাহ রাহমানিয়া আজও অগ্রসরমান ৷ ভালো ফলাফল অনেক মাদরাসাই করে ৷ তবে ধারাবাহিক সফলতার ক্ষেত্রে জামিয়া রাহমানিয়ার অবস্থান সত্যিই বিরল ৷

চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রকাশিত বেফাকের ফলাফলেও জামিয়া রাহমানিয়া লাভ করেছে ঈর্ষণীয় অবস্থান ৷
মেশকাত ( ফযীলত) শ্রেণীতে রাহমানিয়া থেকে ২য়, ৩য়সহ শীর্ষদশের পাঁচটি, আর মেধা তালিকার মোট সাতটি স্থান পায় রাহমানিয়ার শিক্ষার্থীরা ৷ শরহে বেকায়া( সানাবিয়া উলয়া) থেকেও পাঁচজন স্থান পায় মেধা তালিকায় ৷ আর নাহবেমীর ( মুতাওয়াসসিতা) শ্রেণীতে ১ম, ৩য়সহ শীর্ষ দশে চারজন আর মেধা তালিকায় মোট ৪৩জন স্থান পায় ৷ তাইসীর (ইবতিদাইয়াহ) শ্রেণীতে মেধা তালিকার স্থান হল মোট ৩৮টি ৷ কিতাব বিভাগের চারটি মারহালা থেকে মোট ২৬০জন শিক্ষার্থী বেফাক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর ১ম ২য় ৩য়সহ মোট ৯৩টি মেধা তালিকার স্থান পায় ৷ নিঃসন্দেহে এই ফলাফল জামিয়ার শিক্ষার মানের একটি মাইল ফলক ৷
এ সংবাদ রাহমানিয়ার শুভাকাংক্ষীদের জন্য চোখের শীতলতা ৷
শোকর মহান রব্বে কারীমের!
দোয়া করি হযরত শাইখুল হাদীস রহঃএর কলিজার টুকরা, আমাদের প্রাণপ্রিয় জামিয়া রাহমানিয়াকে আল্লাহ তা’আলা দিন দিন সর্বদিক দিয়ে আরো উন্নতি দান করুন ৷

সাফল্যের প্রতিটি পর্বেই স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে শায়খের মুখচ্ছবি ৷ শায়খের রচিত তারানায়ে জামিয়ার সর্বশেষ পংতিটি উচ্চারিত হত
” শামশীরে খোদা হো ইসকা মুহাফিজ: ইয়ে হুসনো খুবী কা মাজমা’ হায়” আর শায়খের চোখ দিয়ে দরদর করে গড়িয়ে পড়ত মিনতির অশ্রু ৷ জীবনে যতবার শায়খের উপস্থিতিতে এ তারানা গাওয়া হয়েছে ততবারই দেখেছি তাঁকে অশ্রুশিক্ত হতে ৷ কতটা ভালোবাসতেন তিনি তাঁর রাহমানিয়াকে, এ দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য যাদের হয়েছে তাদের জন্য আর কোনো বিবরণের দরকার নেই ৷
হে রাহমানিয়ার অনুরাগী! আসো না আমরাও আরেকবার খোদার দরবারে ফরিয়াদ জানাই-
শামশীরে খোদা হো ইসকা মুহাফিজ…
আমীন ৷ সুম্মা আমীন ৷