তারাবীহ পড়িয়ে বিনিময় নেয়া প্রসঙ্গে।

বরাবর,
মুহতারাম মুফতী সাহেব সমীপেষু
জামিয়া রাহমানিয়া ‍আরাবিয়া
সাত মসজিদ, মুহাম্মদপুর, ঢাকা-1207

বিষয়: তারাবীহ পড়িয়ে বিনিময় নেয়া প্রসঙ্গে।

জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে,
খতম তারাবীহ এবং সূরা তারাবীহ পড়িয়ে বিনিময় নেয়া জায়েয আছে কি ?
কিছু আলেম বলেন, খতম তারাবীহ পড়িয়ে বিনিময় নেয়া জায়েয নেই। তবে সূরা তারাবীহ পড়িয়ে বিনিময় নেয়া জায়েয আছে। এ কথাটি কতটুকু সহীহ।
খতম তারাবীহ এবং সূরা তারাবীতে বিনিময় গ্রহণ করা বা গ্রহণ না করার ক্ষেত্রে ইল্লত বা কারণ কি? দলিল প্রমাণসহ জানাবেন। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন।

নিবেদক
হাফেজ মাওলানা মুহা. শেখ শাফায়াত করিম
সোনাতলা বাজার, অভয় নগর, যশোর

بسْم الله الرّحْمن الرّحيْم
ফত্ওয়া বিভাগ                                                                        তারিখ16:/3/1434 হিজরি
জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া,সাত মসজিদ,মুহাম্মদপুর,ঢাকা-১২০৭,মোবাইলঃ ০১৮১৬৩৬৭৯৭৫

حامدا و مصليا ومسلما
উত্তরঃ-
সূরা তারাবীহ পড়িয়ে টাকা নেয়া জায়েয আছে। কেননা, সূরা তারাবীতে মূল লক্ষ্য থাকে নামায পড়ানো। আর নামাযের ইমামতি করে বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ। তাই সূরা তারাবীহ পড়িয়ে টাকা নেয়া যাবে।
পক্ষান্তরে খতম তারাবীতে যেহেতু খতমই মূল লক্ষ্য থাকে, তাই খতম তারাবীহ পড়িয়ে টাকা নেয়া ও দেয়া জায়েয নেই। কেননা, তা খতমেরই বিনিময় বলে গণ্য হবে। বিশেষ করে বর্তমানে আমাদের সমাজে রমযানের শেষে যে পদ্ধতিতে হাফেজগণের জন্য চাঁদা উঠানো হয় এবং হাফেজ সাহেবদের তা প্রদান করা হয়, তা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। কেননা, উক্ত পদ্ধতিতে শরিয়তে নিষিদ্ধ একাধিক কারণ বিদ্যমান।
উল্লেখ্য, কোরআনে কারীম হেফজ করার ‍সুযোগ পাওয়া বান্দার প্রতি আল্লাহ পাকের বিশেষ নেয়ামত সমূহের অন্যতম। কয়েকটি টাকা কখনই এর বিনিময় হতে পারে না। তাই কোরআনে কারীমের খতম উপলক্ষে কোনো টাকা প্রদান করা এবং গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা অবশ্য কর্তব্য। তবে যদি কোথাও মসজিদের ইমামই তারাবীর নামায পড়ান, সেক্ষেত্রে পূর্ব চুক্তি ছাড়া ইমাম সাহেবকে অন্য মাসের তুলনায় বোনাস হিসাবে অতিরিক্ত হাদিয়া দেয়া যাবে। অথবা কোনো ক্ষেত্রে কোনো পক্ষ থেকেই টাকা-পয়সা দেয়া-নেয়ার ব্যাপারে পূর্ব চুক্তি না থাকলে এবং টাকা না দিলে কোনোরূপ অসন্তুষ্ট না হলে কোনো ব্যক্তি কাউকে কিছু না জানিয়ে একান্ত ব্যক্তিগত ভাবে বিনিময়ের নিয়্যত ছাড়া হাফেজ সাহেবকে হাদিয়া স্বরূপ ‍কিছু দেন, তাহলে তা গ্রহণ করা তার জন্য বৈধ হবে। অবশ্য সর্বাবস্থায় কোনো টাকা-পয়সা ইত্যাদি না নেয়াই উত্তম।
كما قال الله تعالى فى القرآن الكريم :
{وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِ} [البقرة: 41]
وأخرج الإمام البيهقى فى شعب الإيمان : (4/ 196)
عن سليمان بن بريدة، عن أبيه، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من قرأ القرآن يتأكل به الناس جاء يوم القيامة ووجهه عظم ليس عليه لحم.
وأخرج ابن أبي شيبة فى مصنفه : (2/ 168)
عن عبد الله بن مغفل: أنه صلى بالناس في شهر رمضان، فلما كان يوم الفطر بعث إليه عبد الله بن زياد بحلة وبخمسمائة درهم فردها، وقال: إنا لا نأخذ على القرآن أجرا.
وأحرج ابن أبي شيبة فى مصنفه : (6/ 456)
أن سعد بن مالك فرض لمن قرأ القرآن في ألفين ألفين، فبلغ ذلك عمر فكتب إليه أن لا يعطي على القرآن أجرا.
وفى حلية الأولياء وطبقات الأصفياء : (7/ 142)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ أَخَذَ عَلَى الْقُرْآنِ أَجْرًا فَذَاكَ حَظُّهُ مِنَ الْقُرْآنِ.
وفى حاشية ابن عابدين : (6/ 56)
وقال العيني في شرح الهداية ويمنع القارىء للدنيا والآخذ والمعطي آثمان فالحاصل أن ما شاع في زماننا من قراءة الأجزاء بالأجرة لا يجوز لأن فيه الأمر بالقراءة وإعطاء الثواب للآمر والقراءة لأجل المال فإذا لم يكن للقارىء ثواب لعدم النية الصحيحة فأين يصل الثواب إلى المستأجر ولولا الأجرة ما قرأ أحد لأحد في هذا الزمان بل جعلوا القرآن العظيم مكسبا ووسيلة إلى جمع الدنيا إنا لله وإنا إليه راجعون.
وفى البحر الرائق : (8/ 23)
وفي الروضة وفي زماننا يجوز للإمام والمؤذن والمعلم أخذ الأجرة.
وفى الدر المختار: (6/ 55)
ويفتى اليوم بصحتها لتعليم القرآن والفقه والإمامة والأذان.
وفى مجمع الأنهر في شرح ملتقى الأبحر: (3/ 533)
ويفتى اليوم بالجواز أي بجواز أخذ الأجرة على الإمامة وتعليم القرآن والفقه والأذان كما في عامة المعتبرات وهذا على مذهب المتأخرين من مشايخ بلخي استحسنوا ذلك.
ويراجع أيضا :
إمداد الفتاوى : (1/484) و إمداد المفتين : (365)
والله اعلم بالصواب
محمد رفيق الاسلام عفى عنه
دار الإفتاء والإرشاد
بالجامعة الرحمانية العربية
1207سات مسجد محمد بور داكا-